জেনে নিন গাজর খেলে কি হয় এবং গাজরের উপকারিতা ও অপকারিতা

সবুজ এবং পাতাওয়ালা সবজি বা ফলমূলের মধ্যে গাজরের উপকারিতা অনেক বেশি । গাজরের উপকারিতা এবং প্রশংসা বেশি হওয়ায় গাজরকে সুপারফুড বলা হয়ে থাকে। 


গাজর খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা


গাজর সালাদ হিসেবে আমরা বেশি ব্যবহার করে থাকি। এই গাজর পোলাও এবং খিচুড়ির সাথে রান্না করা সহো গাজরের আচার এবং হালুয়া সুস্বাদু এবং পুষ্টিতে ভরপুর খাবার হিসেবে খাওয়া হয়। 


গাজরের মধ্যে যে ভিটামিন রয়েছে তা আমাদের দেহকে সুস্থ রাখার সাথে সাথে এটি আমাদের দাঁত মজবুত রাখে এবং ত্বককে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।


গাজরে বিভিন্ন রকমের ভিটামিন থাকায় গাজর খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি। আমরা অনেকে গাজর খেলেও এই গাজরের উপকারিতা সম্পর্কে জানিনা। তো দেখি নিন গাজরের উপকারিতা-


গাজরের উপকারিতাঃ

  1. গাজর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
  2. দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে
  3.  লিভারের সমস্যার সমাধান করে 
  4. ত্বক সুন্দর রাখে এই গাজর
  5. গাজর কানের ব্যথা উপশম করে 
  6. গাজর হার্টের সুরক্ষা করে থাকে
  7. গাজর কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে থাকে
  8. গাজর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে 
  9. গাজর শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে
  10. গাজর স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়
  11. গাজর ওরাল স্বাস্থ্য সুরক্ষা করে থাকে 

০১- ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে গাজরের উপকারিতাঃ

সাধারণত গাজর খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। কারণ গাজরে রয়েছে Falcarindiol এবং Falcarinol যা আমাদের শরীরে থাকা এন্টি-ক্যান্সার উপাদানগুলোকে শক্তিশালী করে। তাই গাজর খেলে প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্তের ঝুঁকি থেকে নিরাপদ থাকা যায়। 


সাধারণত হজমের পর খাবারের কিছু অংশ আমাদের পেটে থাকে যাকে আমরা মৌল বা রেডিকেলস বলে থাকি। এই মৌলগুলো আমাদের শরীরের কিছু কোষ নষ্ট করে থাকে। গাজর খেলে এই মৌল থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।



০২- দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে গাজরের উপকারিতাঃ

আপনার দৃষ্টিশক্তি কম থাকলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর জন্য গাজর খেতে পারেন। তাছাড়া রাতকানা রোগীদের জন্য গাজর অনেক উপকারী। কারণ গাজরে যে বিটা ক্যারোটিন রয়েছে তা ভিটামিন-এ তে রূপান্তরিত হয়ে দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। 

০৩- লিভারের সমস্যা সমাধানে গাজরের উপকারিতাঃ

লিভারের সমস্যা সমাধানে গাজর অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কারণ গাজরে প্রচুর দ্রবনীয় ফাইবার রয়েছে লিভারকে পরিষ্কারে উপকার করে থাকে। এই গাজর কোলেস্টেসিস এবং সিরোসিস থেকে লিভারকে রক্ষা করে। লিভারের ফ্যাট কমাতে গাজর অনেক উপকারি।

০৪- ত্বক সুন্দর রাখতে গাঁজার উপকারিতাঃ

ত্বক সুন্দর রাখতে গাজরের ভূমিকা বিশাল। এই গাজর রোদে ত্বকের পোড়া ভাব দূর করে থাকে। মুখের দাগ এবং বয়সের ছাপ দূর করতে গাজর অনেক উপকারী। তাছাড়া গাজর আমাদের ত্বক শুকিয়ে যাওয়া থেকে প্রতিরোধ করে ত্বককে সতেজ এবং সুস্থ করে তোলে।

০৫- কানের ব্যথা নিরাময়ে গাজরের উপকারিতাঃ

আমাদের অনেক সময় বিভিন্ন কারণে কানে ব্যথা হয়ে থাকে।  কখনো কখনো সর্দি-কাশি বা অন্য কোনো অসুস্থতার পার্শপ্রতিক্রিয়া হওয়ার কারণে কানের ব্যথা হতে পারে। গাজর, কলা, আদা, এবং রসুন, পানিতে একসাথে সিদ্ধ করে দুই-এক ফোঁটা কানে দিলে কানের ব্যথা কমে যায়।

০৬- হার্টের সুরক্ষায় গাজরের উপকারিতাঃ

এই গাজর কোলেস্টেরল ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে থাকে। গাজরে যে ফাইবার রয়েছে তা কোলেন পরিষ্কার রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হতে দেয় না। গাজর আরবিসিকে দীর্ঘস্থায়ী করে থাকে। তাছাড়া গাজর আমাদের শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বের করে দেয়।

০৭- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গাজরের উপকারিতাঃ

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গাজর উত্তম খাবার। কারণ গাজর রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তবে যারা কিডনি রোগে ডায়াবেটিসের রোগীদের মিষ্টি গাজর কম খাওয়া উচিত।

০৮- শক্তি বৃদ্ধিতে গাজরের উপকারিতাঃ

শক্তি বৃদ্ধিতে গাজর অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারন গাজর খেলে মানবদেহে শক্তি বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া গাজর শরীরের গঠনে অনেক উপকার করে থাকে।

০৯- এন্টি এজিংয়ে গাঁজারের উপকারিতাঃ

গাজর আমাদের শরীরের এন্টি এজিংয়ের যে সেল রয়েছে তার গতি ধীর করে থাকে। তাই আপনি আপনার যৌবন দীর্ঘ সময়ের জন্য ধরে রাখতে পারবেন। তাছাড়া আমাদের শরীরে ক্ষয়প্রাপ্ত সেল গুলি ঠিক রাখতে গাজর অনেক উপকারী। 

১০- স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে গাজরের উপকারিতাঃ

স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে গাজর অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গাজরে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে যা আমাদেরকে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে থাকে। স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত গাজর খেতে পারেন

১১- ওরাল স্বাস্থ্যের জন্য গাজরের উপকারিতাঃ

গাজর খেলে দাঁত সুস্থ সবল থাকে। তাছাড়া এই গাজর মুখের মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে থাকে। যার কারণে মুখে গন্ধ হয় না এবং মুখের স্বাস্থ্য ঠিক থাকে। গাজরে মধ্যে থাকা ভিটামিন-সি দাত এবং মাড়ির জন্য অনেক উপকারী।

গাজরের অপকারিতাঃ

গাজরের উপকারিতা থাকলেও কিছু অপকারিতা রয়েছে যা আমাদের জানা প্রয়োজন। কারণ গাজরের উপকারিতা জেনে অতিরিক্ত গাজর খাওয়া যাবেনা। বরং গাজরের উপকারিতা জেনে সঠিকভাবে গাজর খেলে গাজরের উপকার সঠিকভাবে পাওয়া যাবে। তো জেনে নিন গাজরের অপকারিতা-

  • অতিরিক্ত গাজর খেলে ত্বকের রং হলুদ হয়।

  • অল্প বয়সী শিশুরা বেশি গাজর খেলে তাদের দাঁতের ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

  • গরমে বেশি গাজর খেলে উচ্চ রক্তচাপ এবং অনিদ্রা হতে পারে। তাই গরমে বেশি গাজর খাওয়া উচিত নয়।

  • অতিরিক্ত গাজর খেয়ে থাকলে পেটের নানা রকম সমস্যা হতে পারে। যেমন পেটব্যথা, ডায়রিয়া, ইত্যাদি। 

  • মহিলারা অধিক পরিমাণে গাজরের রস খেলে তাদের বুকের দুধের স্বাদ পরিবর্তন হয়ে থাকে। তাই তাদের গাজরের রস অতিরিক্ত খাওয়া নিষেধ।

আশা করছি গাজরের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারছেন। তো আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত গাজর খাওয়া উচিত। তাই আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় গাজর রাখতে পারেন। এই গাজর আপনার শরীর সুস্থ রাখতে বিড়াট ভূমিকা পালন করে। তাই দেরি না করে আপনার খাদ্য তালিকায় এখনই গাজর রাখুন এবং নিয়ম মেনে সঠিকভাবে গাজর খান।

Share This Article On:

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url