পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের সকল বিখ্যাত উক্তি জেনে নিন

পদ্মা নদীর মাঝি হচ্ছে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি অনবদ্য উপন্যাস। এটি তার উপন্যাস গুলোর মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় উপন্যাস। অনেকেই পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের বিখ্যাত উক্তি খুঁজে থাকেন। যদি আপনি পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের বিখ্যাত উক্তি জানতে চান তাহলে এই পোষ্ট আপনার জন্য। 


কারণ এই পোস্টে পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের বিখ্যাত উক্তি দেয়া হবে। আপনারা এই পোস্ট থেকে পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের বিখ্যাত উক্তি জানতে পারবেন। তাহলে পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের বিখ্যাত উক্তি পড়তে পুরো পোস্ট পড়তে ভুলবেন না।


পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের বিখ্যাত উক্তি


মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝিঃ 

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় হচ্ছে ভারতীয় লেখক এবং কথা সাহিত্যিক। তার প্রকৃত নাম হচ্ছে প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। সে তার রচনায় মধ্যবিত্ত সমাজ এবং শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছিল। 


তার রচিত উপন্যাস গুলোর মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় হচ্ছে পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাস। এই উপন্যাস ১৯৩৬ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হওয়ার পর ভারতীয় যে সকল উপন্যাস রয়েছে তার মধ্যে সবথেকে বেশি অনুদিত হওয়ার গৌরব অর্জন করে। 


পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসটি পদ্মা নদীর জেলেদের সুখ দুঃখ নিয়ে রচিত। এই উপন্যাসের পটভূমি পদ্মা নদীর তীরবর্তী ফরিদপুর বিক্রমপুর অঞ্চল। উপন্যাসে পদ্মা নদীর তীরবর্তী কেতুপুর এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর মাজি এবং জেলেদের জীবন কাহিনী আলোচনা করা হয়েছে। 


আরো পড়ুনঃ পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাস PDF ডাউনলোড


পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাস সারসংক্ষেপঃ 

পদ্মা নদীর মাঝির উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র হচ্ছে কুবের মাঝি। এই কুবের মাঝি পদ্মা নদীতে নৌকা চালায় এবং মাছ ধরে থাকে। সেই বিশেষ করে পদ্মা নদীতে ইলিশ মাছ ধরে তার জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তার স্ত্রীর নাম হচ্ছে মালা। 


কুবের মাঝি তার সংসারের মধ্যে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার স্ত্রী মালা দেখতে বেশি সুন্দর না হলেও মোটামুটি সুন্দরী। তবে মালার এটি বড় সমস্যা নয়। তার বড় সমস্যা হচ্ছে সে জন্মগতভাবে পঙ্গু। এরপরেও বুকের মাঝেই তার স্ত্রী মালাকে অনেক ভালোবাসি। 


কিন্তু একসময় কুবের মাঝি তার শালিকার প্রতি প্রেমের টান অনুভব করে। এমনকি সে কপিলার সাথে সংসার করার স্বপ্ন দেখে। তার শালিকার নাম হচ্ছে কপিলা। এই কপিলা আসছে পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের নায়িকা। 


কপিলা সম্পর্কে আমার বোন এবং কুবের মাঝির শালিকা। তবে কপিলার স্বামী রয়েছে। কপিলার স্বামীর সাথে বনাবনি না হওয়ায় সে স্বামীর সংসার ছেড়ে দিয়ে বাপের বাড়ি চলে আসে এবং বন্যার সময় তার বোন মালার বাড়িতে বেড়াতে আসে। 


তবে কপিলা অনেক চালাক এবং বুদ্ধি জ্ঞান সম্মত মহিলা। সে এক সময় কুবের মাঝে প্রতি তার টান অনুভব করে। তবে তার স্বামী তাকে ফিরিয়ে নিতে আসলে সে বাধ্য স্ত্রীর মত তার স্বামীর কাছে ফিরে যায়। 


পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হচ্ছে হোসেন মিয়া। এই ঘোষের মিয়া কি করে কিভাবে আয় করে সে সম্পর্কে মানুষ জানেই না। মানুষ একসময় দেখতে পারে সহায় সম্বলহীন হোসেন মিয়া হঠাৎ বড়লোক হয়ে গেছে। 


তবে লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে হোসেন মিয়া একটি জনমানব দীপ কিনেছে যার নাম দিয়েছে ময়নাদ্বীপ। তার উদ্দেশ্য আছে ময়না দিবে জনসমাজ গড়ে তোলা। এই কারণে সে মানুষকে বুঝিয়ে সুজিয়ে অনেক সময় বোকা বানিয়ে তার দিবে রেখে আসতো। 


একবার হোসেন মিয়া কুবের মাঝে কে চুরির অভিযোগে ফাসিয়ে দেয়। তখন কুবের মাঝি জেল থেকে বাঁচতে হোসেন মিয়ার কাছে সাহায্যের জন্য যান। তখন হোসেন মিয়া চালাকি করে তাকে ময়নাদ্বীপে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। কুবের মাঝি ময়নাদ্বীপে যেতে রাজি হলে তার সাথে কপিলা ও যেতে চায়। 


পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাস পড়লে বোঝা যায় কুবেরের প্রতি কপিলার একটি অনুভূতি রয়েছে এবং তারা একে অপরকে ভালোবেসে। এই কারণে পরবর্তীতে তারা দুজন একসাথে ময়নাদ্বীপে চলে যায়। তাদের সকল অতীত স্মৃতি রেখে ময়নাদ্বীপে পাড়ি জমায়। 


পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের বিখ্যাত উক্তিঃ 

এখানে পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের কিছু বিখ্যাত উক্তি আলোচনা করা হলো। তাহলে পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের বিখ্যাত উক্তি গুলো হচ্ছে - 


"মাথার ভাগ দিবান আইঠা কলা দিব, দেইখো।”- মালা, কুবেরকে।


“জীবন তাহাকে অলস করিয়া বিষণ্ন করিয়াছে। ভাই বোনদের কাছে পাইয়া কতকাল পরে যে মুখ তাহার বিষণ্নতার ছায়া লেকাহীন হাসি ফুটিল।" - মালার উক্তি। 


“জন্মের অভ্যর্থনা এখানে গম্ভীর, নিরুৎসব, বিষণ্ন জীবনের স্বাদ।” 


“ঘরের লক্ষ্মী যেন চলিয়া গেছে কপিলার সঙ্গে পরিপূর্ণভাবে ক্ষুধার নিবৃত্তি আর হইতেছে না।" - ঘরের লক্ষ্মী কপিলা।


“পাপ মাইখা মরিস কেনে কপিলা? মাইনসে কইব কি ? যা বাড়ি যা।” - কপিলাকে কুবের এর উক্তি। 


“শবের মত চিতার আগুনের সামান্যতম সমিধটির ও মানুষের ঘরে স্থান নাই।”


“দুষ্ট কইরে। মাঝি শাইপো- কিন্তু এই কথাডা কইও দিদিরে। মাথা খাও মাঝি কইও।” - কপিলার উক্তি।


“গরীবের মধ্যে সে গরীব, ছোটলোকের মধ্যে আরও বেশি ছোটলোক।” - কুবেরকে উদ্দেশ্য করে।


“একটু জিরাইগো আজান খুড়া" - কুবেরের উক্তি।


"ঈশ্বর থাকেন ঐ গ্রামে, ভদ্রপল্লীতে, এইখানে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।" - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের খেদোক্তি।


“জীবন যুদ্ধে জয় - পরাজয়ের একেবারে মিলন সীমান্তে তাহারা বাস করে, মিত্র তাহাদের কেহ নাই।”


“সাঁঝের দরটা জিগা দেখি কুবের" - ধনঞ্জয়ের উক্তি।


“মনে মনে সকলেই যাহা জানে মুখ ফুটিয়া তাহা বলিবার অধিকার তাহার নাই।" - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বঞ্চিতদের সম্পর্কে।


“একখানা গীত ক দেখি কুবির।" - গণেশের এই মিনতি।


“শ্যাষ রাইতে তর বৌর ছাওয়াল হইছে কুবির।" - নকুলের উক্তি।


“চুপ যা গণেশ। পোলা দিয়ে করম কি? নিজেগোর খাওনা জোটেনা পোলা!" - কুবেরের উক্তি।


পোলা হইব কই নাই কুবির ? কইনাই এইবার তোর পোলা না হইয়া যায় না? - গণেশের কথা।


“ক্যান কমু জ্যাঠা? বজ্জাতটা আমারে যা মুখে লয় কয়না?" - নকুল সম্পর্কে, গোপী।


তোমাগো দেইখা মুখে রাও সরে না, কতকাল পরে ফিরে আলাম।" - রাসু, কুবেরকে উদ্দেশ্য করে।


“গরীব বইলা চাল কর্জ না দেওনের মত গরীব আমি না, জাইনা থুইস।” - গণেশকে, কুবের বললো।


“তা শুইনা তোর কাম কি ? মাইয়া লোক চুপ মাইরা থাক।" - মালাকে, কুবের বললো।


"মনের ক্রিয়াগুলি তার অত্যন্ত শ্লথ গতিতে সম্পন্ন হয়। সে কোন কথা বলিলে লোকে যে তাহাকে অবহেলা করিয়াই কথা কানে তোরে না এটুকুও সে বুঝিতে পারে না।" - গণেশ সম্পর্কে এখানে বলা হয়েছে।


“নদীতে শুধু জলের স্রোত। জলে-স্থলে মানুষের অবিরাম জীবনপ্রবাহ।” - পদ্মার ঘাট সম্পর্কে।


“যে যাহারে ভালবাসে সে তাহারে পায় না।" - গণেশের গানের কথা।


নাই কিরে নাই ? রোজ আমারে মাছ দেওনের কথা না তর? - শীতল, কুবেরকে উদ্দেশ্য করে।


“কতটি মাছ হইল আজান খুড়া ? শ‘চারের কম না অ্যা? - কুবেরের উক্তি।


“তিনডা মাছ আইজ তুই দে কুবের। অমন করস ক্যান?" পয়সা নয় কয়ডা বেশিই লইস, আই ? - কুবেরকে, শীতল বললো।


“আমারে নিবা মাঝি লগে?” - কপিলার কুবেরের প্রতি উক্তি। 


"নদীতে কত মানুষ পারাপার নদী বা কতজনকে মনে রাখে।" 


"অন্ধকারে যে বাস করে মৃদু আলোতে তাহার চোখ ঝলসাইয়া যায়। চোখ ঝলসানো আলোতে সে হয় অন্ধ।" 


"কী ক্ষতি মুসলমানের রান্না খাইলে? ডাঙার গ্রামে যারা মাটি ছানিয়া জীবিকা অর্জন করে তাহাদের ধর্মের পার্থক্য থাকে, পদ্মানদীর মাঝিরা সকলে একধর্মী।"


এই ছিলো পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের বিখ্যাত উক্তি। এখানে পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের সকল বিখ্যাত উক্তি আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি আপনারা পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের বিখ্যাত উক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। 


পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের বিখ্যাত উক্তি পরিশেষেঃ 

পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের বিখ্যাত উক্তি নিয়ে এই পোস্ট আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে এবং কাজে আসবে। যদি এই পোস্ট আপনাদের ভাল লাগে এবং কাজে আসে তাহলে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এছাড়াও যদি আপনাদের কোথাও বুঝতে সমস্যা হয় অথবা পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের বিখ্যাত উক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত আরো কিছু জানতে চান তাহলে কমেন্টে জানাতে পারেন। তবে এরকম সকল নতুন পোস্টের আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক ও গুগল নিউজে ফলো দিয়ে পাশে থাকতে ভুলবেন না। 

Share This Article On:

Next Post Previous Post
2 Comments
  • Anonymous
    Anonymous May 20, 2023, 5:20:00 PM

    নদীতে কত মানুষ পারাপার নদী বা কতজনকে মনে রাখে পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের উক্তি দয়া করে যুক্ত করবেন?

    • MD. Marzan Islam
      MD. Marzan Islam May 21, 2023, 7:59:00 PM

      ধন্যবাদ, উক্তিটি যুক্ত করা হয়েছে..

Add Comment
comment url