আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি ব্যাখ্যা ও প্রতিষ্ঠাকরন সম্পর্কে আলোচনা

আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। এছাড়াও বিভিন্ন পরীক্ষায় "আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি" সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন আসে। যদি আপনি আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি সম্পর্কে না জানেন তাহলে এই পোস্ট আপনার জন্য। 


কারণ এই পোস্টে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাকরন সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। আপনারা পুরো পোস্ট পড়ার মাধ্যমে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। তাহলে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাকরন সম্পর্কে জেনে নিন- 


আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি ব্যাখ্যা করো


আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি জানার গুরুত্বঃ 

আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। কারণ পাকিস্তানকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রকাশিত করা এবং দেশের আর্থসামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের উদ্দেশ্যে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান, পাট শিল্পকে জাতীয়করণ করা, জমিদারি প্রথা নিষিদ্ধ করা, পূর্ব বাংলায় প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা প্রভৃতি ক্ষেত্রে এ সংগঠনটি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। 


এছাড়াও বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন আসে। যারা স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের ছাত্র তাদের বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে - আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি ব্যাখ্যা কর অথবা আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাকরন সম্পর্কে আলোচনা কর। 


নিম্নে আমি সেই প্রশ্নের উত্তর সাজিয়ে দিয়েছি। আপনারা উত্তরটি পড়ে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি জানার পাশাপাশি আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি ব্যাখ্যা কর অথবা আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাকরন সম্পর্কে আলোচনা কর এইসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন। 


আরো পড়ুনঃ মুক্তিযুদ্ধের যেকোনো দুটি সেক্টর সম্পর্কে আলোচনা


আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাকরন সম্পর্কে আলোচনা কর?

উত্তর : ভূমিকা : 

স্বাধীনতা প্রাপ্তির বেশ কিছু সময় পর পূর্ব বাংলা আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। স্বাধীনতা প্রাপ্তির পরপরই মুসলিম লীগের কিছু সুবিধাভোগী সদস্যরা অবাঙালি অফিসারদের কাছ থেকে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে থাকে। 


আর এ বিষয়টিই পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই পূর্ব বাংলা আওয়ামী মুসলিম পূর্ব পাকিস্তানে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে।


আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা : 

মূলত পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক চাপের মুখে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। মুসলিম লীগের সুবিধাভোগী অংশ যখন প্রশাসনিক দিক থেকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছিল তখন মুসলিম লীগের শাসকগোষ্ঠীর একটি অংশ তাদের সাথে যোগ দেয়। 


ফলে নাজিমউদ্দিন বিরোধী অংশটি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে ১৯৪৮ সালে জানুয়ারি মাসে ঢাকার ১৫০নং মোগলটুলিতে এক সম্মেলনের আয়োজন করেন। উক্ত সম্মেলনে ওয়াকর্ম ক্যাম্প নামক একটি গ্রুপ গঠিত হয়েছিল। এতে মুসলিম লীগের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওয়ার্কস ক্যাম্প গ্রুপের সাথে বিবাদ শুরু করে। 


এমনটি আকরাম খাঁ 'ওয়ার্কস ক্যাম্প গ্রুপ'- কে রসিদ বই পর্যন্ত দেয়নি। তখন উক্ত গ্রুপ মুসলিম লীগের সভাপতি খালেকুজ্জামানের নিকট অভিযোগ জানালে তিনি আকরাম বার সিদ্ধান্তকেই সমর্থন জানান। এ ঘৃণ্যকর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ১৯৪৯ সালের ২৩-২৪ জুন ওয়াকর্ম ক্যাম্প গ্রুপ ঢাকার কে. এম. দাস লেনের রোজ গার্ডেনে এক সম্মেলনের আয়োজন করেন। 


উক্ত সম্মেলনে সমগ্র পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সকল নেতাকর্মী বৃন্দকে যোগদানের জন্য আহ্বান জানানো হয়। ফলে উক্ত সম্মেলনে সমগ্র পূর্ব বাংলার প্রায় সব জেলা থেকে তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। উক্ত সম্মেলনে আবদুল হামিদ খান ভাসানী উদ্বোধনী ভাষণ দিয়েছিলেন। 


উক্ত সম্মেলনে পূর্ব বাংলার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল যা মুসলিম লীগ সরকার নিরসন করতে পারেনি। উদাহরণস্বরূপ ১৯৪৯ সালের মে মাস থেকে পূর্ব বাংলায় খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছিল, ঢাকা শহরে পানির সংকট দেখা দিয়েছিল, সেগুলোর কোনো প্রতিকার করতে মুসলিম লীগ সক্ষম হয়নি। এছাড়াও নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি, গ্রামে গ্রামে কৃষক বিদ্রোহ, ম্যালেরিয়ার প্রকোপ, কমিউনিস্টদের তৎপরতা, রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিতর্ক ইত্যাদি ঘটনাগুলো ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। 


এ সম্মেলনে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ' বা জনগণের মুসলিম লীগ' নামক একটি রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, আতাউর রহমান খান, আব্দুস সালাম খান, সাখাওয়াত হোসেন, আলী আহামদ এবং আলী আমজাদ খান সহসভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। 


এছাড়া বিশিষ্ট যুবনেতা এবং পরবর্তীকালে বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ১৯৫৫ সালে ২২ সেপ্টেম্বর আওয়ামী মুসলিম লীগ হতে ‘মুসলিম' শব্দটির বাদ দিয়ে ‘আওয়ামী লীগ' নামকরণ করা হয়। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ নামক রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠার সময়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। 


তবে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিতে বসে আইন ব্যবসা এবং আওয়ামী লীগ নামক একটি দল সংগঠিত করার চেষ্টা করছিলেন। পরবর্তীকালে সোহ্রাওয়ার্দীকে আওয়ামী মুসলিম লীগের সাথে সম্পৃক্ত করে তাঁকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দেওয়া হয়। নবগঠিত এ সংগঠনটি ১২ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করেছিল। আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা ছিল উক্ত দাবিসমূহের মধ্যে প্রধান দাবি। 


উপসংহার : 

পরিশেষে বলা যায় যে, পাকিস্তানকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রকাশিত করা এবং দেশের আর্থসামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের উদ্দেশ্যে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যদিও প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে এ দলটি বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেছিল। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান, পাট শিল্পকে জাতীয়করণ করা, জমিদারি প্রথা নিষিদ্ধ করা, পূর্ব বাংলায় প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা প্রভৃতি ক্ষেত্রে এ সংগঠনটি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। 


পরিশেষে বলতে চাচ্ছিঃ 

এই ছিলো আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি। আশা করছি আপনারা আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাকরন জানতে পেরেছেন। আপনারা উপরের পোস্ট থেকে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি জানার পাশাপাশি বিভিন্ন পরীক্ষায় আসা "আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাকরন সম্পর্কে আলোচনা কর?" এই সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন। আশা করছি আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি সম্পর্কে এই পোস্ট আপনাদের ভালো লাগবে এবং কাজে আসবে। যদি এই পোস্ট আপনাদের ভালো লাগে এবং কাজে আসে তাহলে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এছাড়াও যদি আপনাদের কোথাও বুঝতে সমস্যা হয় অথবা বিস্তারিত আরো কিছু জানতে চান তাহলে কমেন্টে জানাতে পারেন। এছাড়াও এরকম আরো নতুন পোস্ট পেতে ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে মেসেজের মাধ্যমে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ। 

Share This Article On:

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url