জিমেইল সুরক্ষিত রাখার উপায় । যেভাবে জিমেইল অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখবেন

স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা নিশ্চয়ই জিমেইল একাউন্ট সম্পর্কে জানেন। কাউকে মেইল পাঠানো অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় একাউন্ট খোলার জন্য আমাদেরকে জিমেইল আইডির প্রয়োজন হয়ে থাকে। জিমেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করার মাধ্যমে আমরা গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্ট খুলে থাকি। যেহেতু আমরা জিমেইল এর মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সকল একাউন্ট খুলি তাই আমাদের জিমেইল সুরক্ষিত রাখতে হয়। 


তবে আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে যারা জিমেইল সুরক্ষিত রাখার উপায় জানেন না। যদি আপনি জিমেইল অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখার উপায় না জানেন তাহলে এই পোস্ট আপনার জন্য। এই পোস্টে আমি আপনাদেরকে কিভাবে জিমেইল সুরক্ষিত রাখতে হয় তার উপায় দেখাবো। আশা করছি আপনারা পুরো পোস্ট পড়ার মাধ্যমে জিমেইল একাউন্টের নিরাপত্তা জানতে পারবেন। 


gmail-accounts-securing-rules
জিমেইল সুরক্ষিত রাখার উপায়

জিমেইল অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখার কারণ ।  জিমেইল একাউন্টের নিরাপত্তাঃ 

নিজের জিমেইল অ্যাকাউন্ট অবশ্যই সুরক্ষিত রাখতে হবে। আমরা সকলেই জানি যে একটি জিমেইল অ্যাকাউন্ট কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে জিমেইল আইডি হ্যাক হওয়ার প্রবণতা অনেক বেরে গেছে। অনেকের অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিমেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক হচ্ছে। বিশেষ করে যাদের পপুলার ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে সেই সকল ইউটিউব চ্যানেলের জিমেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাকাররা হ্যাক করে নিচ্ছে। 


এছাড়াও যদি আমাদের জিমেইল আইডি দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একাউন্ট খোলা হয়ে থাকে তাহলে হ্যাকাররা আমাদের জিমেইল আইডি হ্যাক করার চেষ্টা করবে। যদি আমাদের জিমেইল অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত না থাকে তাহলে হ্যাকাররা খুব সহজেই আমাদের জিমেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সকল অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে পারবে। এই কারণে আমাদেরকে অবশ্যই জিমেইল একাউন্টের নিরাপত্তা রাখতে হবে। 



জিমেইল সুরক্ষিত রাখার উপায়। জিমেইল নিরাপদ রাখার উপায়ঃ 

নিজের জিমেইল আইডি সুরক্ষিত রাখার জন্য আমাদেরকে অনেক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। জিমেইল আইডি সুরক্ষিত রাখার জন্য কিছু কাজ করতে হয় যেগুলো করার মাধ্যমে আমাদের জিমেইল একাউন্ট সুরক্ষিত রাখতে পারি। আপনারা যদি নিজের জিমেইল অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখতে চান তাহলে অবশ্যই নিচের কাজগুলো step by step করে নিবেন। 

জিমেইল অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখার জন্য যেসকল কাজ করতে হবে তা হচ্ছে - 


  • জিমেইল একাউন্টে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন। 
  • জিমেইল একাউন্টে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন' চালু রাখবেন। 
  • জিমেইল একাউন্টে রিকভারি ইমেইল বা নাম্বার যুক্ত করবেন। 
  • জিমেইল একাউন্টের পাসওয়ার্ড অন্য কোথাও ব্যবহার করবেন না। 
  • সন্দেহজনক ইমেইল আনসাবস্ক্রাইব করবেন। 
  • সকল ডিভাইস থেকে নিজের জিমেইল লগ আউট করে দিতে হবে। 
 

সাধারণত এই সকল বিষয়ের প্রতি নজর দিলে নিজের জিমেইল আইডি সুরক্ষিত রাখা যায়। এর পরেও আপনারা বিস্তারিত জানতে নিচের পোস্ট পড়ুন। 


জিমেইল একাউন্টে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা । জিমেইল একাউন্টের নিরাপত্তাঃ


জিমেইল একাউন্ট শক্তিশালী রাখার জন্য অবশ্যই জিমেইল আইডিতে একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। সহজ এবং মানুষ অনুমান করতে পারে এমন পাসওয়ার্ড জিমেইল একাউন্টের ব্যবহার করবেন না। শক্তিশালী পাসওয়ার্ড বলতে আপনারা গানিতিক নাম্বার, ছোট হাতের বড় হাতের অক্ষর এবং সিম্বল সবগুলো মিলিয়ে পাসওয়ার্ড রাখবেন। যেমন - DppAAA@@##$$1155 


আপনারা উক্ত পাসওয়ার্ড লক্ষ্য করলে দেখতে পারবেন যে সেখানে ইংরেজি ছোট হাতের বড় হাতের অক্ষর এবং সিম্বল সহ গাণিতিক সংখ্যা রয়েছে। যদি আপনারা এরকম শক্তিশালী পাসওয়ার্ড নিজের জিমেইল একাউন্টে ব্যবহার করেন তাহলে আপনাদের জিমেইল অ্যাকাউন্ট অনেকটাই সুরক্ষিত থাকবে। 


জিমেইল একাউন্টে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন' চালু করাঃ 


জিমেইল আইডি সুরক্ষিত রাখার জন্য অবশ্যই টু স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করতে হবে। যদি আমাদের জিমেইল একাউন্টে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন' চালু থাকে তাহলে আমাদের জিমেইল একাউন্টের পাসওয়ার্ড কেউ জানলেও আমাদের জিমেইল আইডিতে প্রবেশ করতে পারবে না। কারণ জিমেইল টু স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু থাকলে পরবর্তীতে সেই জিমেইলে লগইন করার সময় আমাদের সেট করা নাম্বারে একটি কোড যায়। সেই কোড ব্যবহার করার মাধ্যমে আমরা আমাদের জিমেইল আইডিতে প্রবেশ করতে পারি। 


এখন যদি আপনারা আপনাদের জিমেইল আইডিতে টু স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করেন তাহলে আপনাদের জিমেইল আইডির পাসওয়ার্ড কেউ জানলেও আপনাদের মোবাইলে আশা কোড কেউ জানতে পারবে না। এতে আপনার জিমেইল আইডিতে কেউ লগইন করতে পারবে না এবং আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত থাকবে। যদি আপনারা জিমেইল আইডিতে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন' চালু করার নিয়ম না জানেন তাহলে আমার পোস্ট করতে পারেন। 


জিমেইল একাউন্ট রিকভারি ইমেইল বা নাম্বার যুক্ত করাঃ 

জিমেইল অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখার জন্য জিমেইল একাউন্টে রিকভারি ইমেইল বা নাম্বার যুক্ত করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। জিমেইল একাউন্ট রিকভারি ইমেইল অথবা নাম্বার যুক্ত করলে পরবর্তীতে আমাদের জিমেইল অ্যাকাউন্ট নষ্ট অথবা হ্যাক হলেও সেই রিকভারি ইমেইল এর মাধ্যমে আমাদের জিমেইল অ্যাকাউন্ট ফেরত পেতে পারবো। এই কারণে আমাদের জিমেইল অ্যাকাউন্ট নষ্ট অথবা হ্যাক হওয়া থেকে বাঁচাতে অবশ্যই জিমেইল একাউন্ট রিকভারি ইমেইল অথবা নাম্বার যুক্ত রাখতে হবে। 



জিমেইল একাউন্টের পাসওয়ার্ড অন্য কোথাও ব্যবহার না করাঃ 

অনেকেই জিমেইল অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড অনেক জায়গায় ব্যবহার করে থাকে। জিমেইল অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখার জন্য আমাদের জিমেইল একাউন্টের পাসওয়ার্ড অন্য কোথাও ব্যবহার করা যাবে না। যদি আমরা দুই নাম্বার অর্থাৎ ফেক কোন ওয়েবসাইটে নিজের জিমেইল একাউন্টের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করি তাহলে সেই ওয়েবসাইটের মালিক আমাদের পাসওয়ার্ড জেনে আমাদের জিমেইল একাউন্টে লগইন করার চেষ্টা করবে। 


এই কারণে আমাদের জিমেইল একাউন্টের পাসওয়ার্ড অন্য কোথাও ব্যবহার করা যাবে না। আপনারা অন্য কোথাও লগইন বা রেজিস্টার করার জন্য জিমেইল একাউন্টের পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করে অন্য কোনো পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন। 


সন্দেহজনক ইমেইল আনসাবস্ক্রাইব করাঃ 

অনেক সময় আমাদের জিমেইলে সন্দেহজনক অনেক মেইল আসে। যদি আমাদের জিমেইলে সন্দেহজনক কোন মেইল আসে তাহলে অবশ্যই সেই সন্দেহজনক মেইলগুলো আনসাবস্ক্রাইব করে রাখতে হবে। কারণ অনেক সময় হ্যাকাররা আমাদের জিমেইল এমন লিংক পাঠায় যেগুলোতে ক্লিক করলে আমাদের জিমেইল হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 


এই কারণে নিজের জিমেইল একাউন্ট নিরাপদ রাখতে অবশ্যই সন্দেহজনক ইমেইল আন সাবস্ক্রাইব করে রাখতে হবে। যদি আমরা সন্দেহজনক ইমেইল আনসাবস্ক্রাইব করে রাখি তাহলে তারা আর ইমেইল পাঠাতে পারবে না। 


সকল ডিভাইস থেকে নিজের জিমেইল লগ আউট করে দেয়াঃ 

সাধারণত আমরা অনেক সময় আমাদের নিজের জিমেইল অ্যাকাউন্ট অনেক ডিভাইসে লগ ইন করে থাকি। জিমেইল অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখার জন্য অবশ্যই সকল ডিভাইস থেকে আমাদের জিমেইল লগ আউট করে দিতে হবে। কারণ যদি আমরা সকল ডিভাইস থেকে নিজের জিমেইল অ্যাকাউন্ট লগ আউট না করে দেই তাহলে অন্য ডিভাইস এর মালিকরা আমাদের জিমেইল আইডি পরিচালনা করতে পারবে। 


এই কারণে শুধুমাত্র নিজের ডিভাইস ব্যতীত অন্য যে সকল ডিভাইসে নিজের জিমেইল অ্যাকাউন্ট লগইন করা থাকবে সেই সকল ডিভাইসে আমাদের জিমেইল লগ আউট করে দিতে হবে। এতে আমাদের জিমেইল অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। তবে যদি আপনারা সকল ডিভাইস থেকে নিজের জিমেইল অ্যাকাউন্ট লগ আউট করার নিয়ম না জানেন তাহলে আমার লেখা পোস্ট পড়তে পারেন - 

সকল ডিভাইস থেকে নিজের জিমেইল অ্যাকাউন্ট লগ আউট করার নিয়ম


সাধারণত এই সকল বিষয়গুলো মানলেই আপনাদের জিমেইল অ্যাকাউন্ট নিরাপদ থাকবে। জিমেইল অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখার জন্য উপরে দেখানো নির্দেশনাগুলো মেনে চললেই যথেষ্ট। 



জিমেইল হ্যাক হয়েছে কিনা বোঝার উপায় । জিমেইল একাউন্টের নিরাপত্তাঃ

আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছিল কিনা সেটা আপনারা খুব সহজেই জানতে পারবেন। জিমেইল হ্যাক হয়েছে কিনা এটা বোঝার জন্য আপনাদেরকে একটি এক্সটেনশন ব্যবহার করতে হবে। গুগোল তাদের ক্রোম ওয়েব স্টোরে “Google Password Checkup” অ্যাড-অন লঞ্চ করেছিল। আপনারা চাইলে এই টুল ব্যবহার করার মাধ্যমে জেনে নিতে পারবেন আপনাদের জিমেইল হ্যাক হয়েছিল কিনা। 


Google Password Checkup ব্যবহার করার নিয়মঃ 


  • প্রথমে আপনাদেরকে গুগল ক্রোম ওয়েব স্টোর থেকে Google Password Checkup এক্সটেনশন ডাউনলোড করতে হবে। 
  • যদি আপনাদের ব্রাউজারে আপনাদের জিমেইল লগইন করা থাকে তাহলে এই টুলসে অটোমেটিক আপনাদের জিমেইল লগইন হয়ে যাবে। আর যদি লগইন না করা থাকে তাহলে লগইন করে নিবেন। 
  • যদি আপনার জিমেইল একাউন্টের ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড গুগলের ডাটাবেজে থাকা ৪০০ - ৫০০ কোটি হ্যাক হওয়া ইমেইলের সাথে মিল থাকে তাহলে এক্সটেনশনটি আপনাকে সতর্ক করে দেবে।

এছাড়াও এই এক্সটেনশন ব্যবহার করার আরেকটি সুবিধা হচ্ছে আপনাদের ইমেইল কোন কোন ওয়েবসাইট থেকে হ্যাক হয়েছিল সেটাও জানিয়ে দেবে। এভাবে আপনারা Google Password Checkup এক্সটেনশন ব্যবহার করার মাধ্যমে নিজের জিমেইল হ্যাক হয়েছিল কিনা জানতে পারবেন। 


এই ছিল জিমেইল সুরক্ষিত রাখার উপায়। আশা করছি আপনারা জিমেইল একাউন্টের নিরাপত্তা জানতে পেরেছেন। জিমেইল অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখার জন্য আপনাদের অবশ্যই উপরে দেখানো পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করবেন। উপরে দেখানো সকল পদ্ধতি অনুসরণ করলে আশা করছি আপনাদের জিমেইল অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত থাকবে। 

পরিশেষে বলতে চাচ্ছিঃ 

জিমেইল অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখার উপায় নিয়ে এই ছিল আমার টিউটোরিয়াল। আশা করছি জিমেইল একাউন্টের নিরাপত্তা নিয়ে এই টিউটোরিয়াল আপনাদের ভালো লাগবে এবং কাজে আসবে। যদি এই পোস্ট আপনাদের ভালো লাগে এবং কাজে আসে তাহলে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এছাড়াও যদি আপনাদের কোথাও বুঝতে সমস্যা হয় অথবা জিমেইল অ্যাকাউন্ট নিয়ে কোন ঝামেলা হয় তাহলে কমেন্টে জানাতে পারেন। ইনশাআল্লাহ সমাধান দেয়ার চেষ্টা করব। 

Share This Article On:

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url