নতুন মোবাইল কেনার পর করণীয় (মোবাইল ভালো থাকবে বহুদিন)

নতুন মোবাইল কেনার পর আমাদের মাঝে অন্যরকম একটি আনন্দ বিরাজ করে। তখন আমরা চিন্তা করি কিভাবে এই নতুন মোবাইল সুরক্ষিত রাখা যায়। যদি আমরা নতুন মোবাইল কিনার পর করণীয় জানি এবং মানি তাহলে সেই মোবাইল দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে পারবো। 


যদি আপনি নতুন মোবাইল কেনার পর করণীয় না জানেন তাহলে সঠিক জায়গায় এসেছেন। কেননা, এই পোস্টে আমি নতুন মোবাইল কেনার পর কি কি করতে হবে সেটা জানাবো। আপনারা নতুন মোবাইল কেনার পর এখানে দেখানো কাজগুলো করার মাধ্যমে আপনাদের মোবাইল দীর্ঘস্থায়ী করতে পারবেন। 


নতুন মোবাইল কেনার পর করণীয়


নতুন মোবাইল কেনার পর কেন যত্ন নিতে হবে?

নতুন মোবাইল কেনার পর হুটহাট ব্যবহার করার ফলে অনেক সময় আমাদের সেই মোবাইলটি দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এছাড়াও দেখবেন অনেকের নতুন মোবাইল দীর্ঘদিন ব্যবহার করলেও আপনার নতুন মোবাইল বেশিদিন ভালো চলছে না। এর কারণ হচ্ছে নতুন মোবাইল কেনার পর কিছু কাজ করতে হয় যেটা আপনি করেননি। 


আপনি যদি উক্ত কাজগুলো করতেন তাহলে আপনার নতুন মোবাইল দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে পারতেন। মোবাইল কেনার সময় আপনার যেমন পারফরম্যান্স থাকতো দীর্ঘদিন পরেও একই পারফরমেন্স পেতেন। এই কারণে নতুন মোবাইল দীর্ঘদিন ভালোভাবে ব্যবহার করার জন্য আমাদেরকে মোবাইলের যত্ন নিতে হবে। যত্ন বলতে নির্দিষ্ট কিছু কাজ করতে হবে। 


নতুন মোবাইল কেনার পর করণীয়ঃ 

নতুন মোবাইল কেনার পর যেসব কাজ করতে হবে তা হচ্ছে-  


  • নতুন মোবাইলের বক্স যাচাই করুন। 

  • মোবাইলের আইএমইআই নম্বর সংরক্ষণ করুন। 

  • মোবাইলে ফুল চার্জ দিন। 

  • মোবাইলে ওয়াইফাই সংযুক্ত করুন।

  • মোবাইল গুগল একাউন্টের সাথে সংযুক্ত করুন। 

  • মোবাইলের অ্যাপ আপডেট করুন।

  • মোবাইলের অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ বা ফাইল ডিলিট করুন।

  • মোবাইলে ব্লোটওয়ার অ্যপ রিমুভ করুন।

  • মোবাইলে লক ব্যবহার করুন।

  • মোবাইলে প্রয়োজনীয় অ্যাপ ইন্সটল করুন।

  • পুরাতন ফোনের ফাইল নতুন মোবাইলে ট্রান্সফার করুন।

  • মোবাইলে ব্যাক কভার ব্যবহার করুন। 

  • মোবাইলে স্ক্রিন প্রটেক্টর ব্যবহার করুন। 


নতুন মোবাইল কেনার পর সাধারণত উক্ত কাজগুলো করতে হয়। তাহলে চলুন উক্ত কাজগুলো কিভাবে করবেন জেনে নেয়া যাক- 


নতুন মোবাইলের বক্স যাচাই করুনঃ 

আপনার নতুন মোবাইল যদি অনলাইন থেকে কেনা হয় তাহলে অবশ্যই মোবাইল বক্স চেক করে নিবেন। আপনার মোবাইল বক্স অথবা ভিতরে থাকা মোবাইল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা চেক করে দেখবেন। যদি দেখেন আপনার মোবাইল অথবা মোবাইল বক্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাহলে সেটি ব্যবহার করার আগেই অনলাইন থেকে পরিবর্তন করে নিতে পারবেন। 


অতঃপর অবশ্যই মোবাইল বক্স খুলে দেখবেন ভিতরে থাকা সকল জিনিসপত্র ঠিক আছে কিনা। মোবাইল বক্সের ভেতর চার্জার এবং ইয়ারফোন এসব জিনিসপত্র দেখে নিবেন। এছাড়াও সেই নতুন মোবাইলের ওয়ারেন্টি কার্ড রয়েছে কিনা চেক করে নিবেন। 


মোবাইলের আইএমইআই নম্বর সংরক্ষণ করাঃ 

নতুন মোবাইল কেনার পর আইএমইআই নাম্বার সংরক্ষণ করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। কারণ এই আইএমইআই নাম্বার ব্যবহার করার মাধ্যমে আমাদের মোবাইল হারিয়ে গেলে, চুরি হয়ে গেলে অথবা ছিনতাই হয়ে গেলে ফিরে পেতে পারবো। 


যদি আপনার মোবাইল হারিয়ে যায়, চুরি হয়ে যায় অথবা ছিনতাই হয়ে যায় তাহলে আপনার মোবাইলের আইএমইআই নম্বর দিয়ে পুলিশের কাছে জিডি করার মাধ্যমে বের করতে পারবেন। আর যদি আপনার মোবাইলের imei নম্বর আপনার কাছে না থাকে তাহলে সেই মোবাইল বের করা অনেক কঠিন হবে। 


মোবাইলের আইএমইআই নম্বর মোবাইল বক্স এর মধ্যে দেখতে পারবেন। যদি আপনার মোবাইলে দুইটা সিম লাগানো থাকে তাহলে আপনার মোবাইলে দুইটি আইএমই নম্বর দেখাবে। তবে অবশ্যই মোবাইলের আইএমই নম্বর সংরক্ষণ করে রাখা উচিৎ। 


নতুন মোবাইলে ফুল চার্জ দেয়াঃ 

নতুন মোবাইল কেনার পর আমাদেরকে সেই মোবাইল সেটআপ করার জন্য যে কাজগুলো করতে হয় তার জন্য মোবাইলে চার্জ এর প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাছাড়া নতুন মোবাইলে ফুল চার্জ থাকেনা। এই কারণে আমরা নতুন মোবাইলে ফুল চার্জ দেয়ার পর সেই মোবাইলে সেটআপ করার বাকি কাজগুলো সহজে সমস্যা ছাড়াই করতে পারি। 


মোবাইলে ওয়াইফাই সংযুক্ত করাঃ 

নতুন মোবাইল কেনার পর আমাদেরকে সেই মোবাইলে কিছু প্রয়োজনীয় অ্যাপ ইন্সটল করতে হয়। সেই অ্যাপগুলো ইন্সটল করার জন্য এবং প্রয়োজনীয় ফাইল ডাউনলোড করার জন্য মোবাইলে নেটওয়ার্কের প্রয়োজন হয়ে থাকে। কিন্তু যদি আপনি মোবাইল ডাটা দিয়ে অ্যাপ্লিকেশন অথবা ফাইল ডাউনলোড করেন তাহলে অনেক সময় এবং এমবি লাগবে। 


এছাড়াও যেহেতু অনেক ফাইল এবং অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করতে হবে তাই মোবাইল ডাটা ব্যবহার করলে মাঝপথেই ইন্টারনেট শেষ হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। এই কারণে মোবাইলে ওয়াইফাই সংযুক্ত করে আপনার নতুন মোবাইলে প্রয়োজনীয় অ্যাপ এবং ফাইল ডাউনলোড করে নিবেন। 


মোবাইল গুগল একাউন্টের সাথে সংযুক্ত করাঃ 

নতুন মোবাইল চালু করার পর সেই মোবাইল গুগল একাউন্টের সাথে কানেক্ট করতে হবে। গুগল একাউন্ট বলতে আপনার জিমেইল এবং সেই জিমেইল এর পাসওয়ার্ড দিয়ে কানেক্ট করবেন। কারণ যদি আপনি মোবাইলে গুগল একাউন্ট কানেক্ট না করেন তাহলে সেই মোবাইল দিয়ে প্লে স্টোর সহো অন্যান্য গুগল সার্ভিস ব্যবহার করতে পারবেন না। 


এই কারণে নতুন মোবাইলে অবশ্যই আপনার জিমেইল কানেক্ট করে নিবেন। আর যদি আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্ট না থাকে তাহলে প্রয়োজনে নতুন একটি জিমেইল অ্যাকাউন্ট খুলবেন। 


নতুন মোবাইলের অ্যাপ আপডেট করাঃ 

নতুন মোবাইলে দেখবেন আগে থেকেই কিছু অ্যাপ ইন্সটল করা থাকে। তবে এই অ্যাপগুলো আগে থেকেই ইন্সটল করা থাকায় পুরাতন ভার্সনের হয়ে থাকে। এই কারণে প্লে স্টোরে প্রবেশ করে আপনার মোবাইলে ইন্সটল থাকা সকল অ্যাপ্লিকেশন আপডেট করে নিবেন। এতে আপনি অ্যাপগুলোর বর্তমান ভার্শন ব্যবহার করে আলাদা ফিচার পাবেন যেগুলো পুরাতন ভার্সনে থাকেনা। 


নতুন মোবাইলের অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ বা ফাইল ডিলিট করাঃ 

নতুন মোবাইলে আপনারা দেখবেন কিছু অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ অথবা ফাইল থাকবে যেগুলো আগে থেকেই ইনস্টল করা থাকে। যদি সেই অ্যাপ অথবা ফাইলগুলো আপনার কাজে না লাগে তাহলে ডিলিট করে দিবেন। কারণ এই অ্যাপ অথবা ফাইলগুলো আমাদের মোবাইলের ফোন মেমোরি দখল করে থাকে। 


আপনার মোবাইলের অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ অথবা ফাইল দিয়ে ফোন মেমোরি যত পূরণ হবে আপনার মোবাইল ততো স্লো হবে। এই কারণে নতুন মোবাইল ফাস্ট রাখতে অবশ্যই অপ্রয়োজনীয় এপ্লিকেশন এবং ফাইল ডিলিট করে দিবেন। 


নতুন মোবাইলে ব্লোটওয়ার অ্যপ রিমুভ করাঃ 

ব্লোটওয়ার হচ্ছে এমন অ্যাপ্লিকেশন যেগুলো মোবাইল কোম্পানি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আপনার মোবাইলে আগে থেকেই ইন্সটল করে রাখে। অর্থাৎ কিছু অ্যাপ্লিকেশন কোম্পানি রয়েছে যারা মোবাইল কোম্পানির সাথে ডিল করে রাখে যে তারা যেন তাদের মোবাইলে তাদের কোম্পানির অ্যাপ্লিকেশন আগে থেকেই ইন্সটল করে রাখে। 


এই অ্যাপ্লিকেশনগুলো সাধারণত মোবাইলে তেমন কাজে আসেনা এবং ব্যাকগ্রাউন্ড চলমান থাকায় মোবাইলের চার্জ দ্রুত শেষ হয়ে থাকে। তাই এরকম ব্লোটওয়ার অ্যাপ রিমুভ করে দিবেন। আর যদি মোবাইলের পলিসির কারণে রিমুভ করা না যায় তাহলে সেটিং থেকে ডিজেবল করে দিবেন। 


নতুন মোবাইলে লক ব্যবহার করাঃ 

আপনার নতুন মোবাইলের নিরাপত্তার জন্য অবশ্যই মোবাইলে লক ব্যবহার করবেন। মোবাইলের সেটিং অপশনে প্রবেশ করলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক, ফেস লক, পাসওয়ার্ড লক এবং প্যাটার্ন লক দেখতে পারবেন। ‌ আপনার যে লক পছন্দ হয় সেই লক নতুন মোবাইলে ব্যবহার করবেন। 


তবে সব থেকে ভালো হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক ব্যবহার করলে। কারণ এতে আপনার হাতের আঙ্গুলের ছাপ ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল খুলতে পারবেনা। এছাড়াও আপনারা চাইলে নতুন মোবাইলে ফেসলক ব্যবহার করতে পারেন। 

আরো পড়ুনঃ মোবাইলে লক ব্যবহার করার নিয়ম

নতুন মোবাইলে প্রয়োজনীয় অ্যাপ ইন্সটল করাঃ 

নতুন মোবাইলে আগে থেকেই সকল প্রয়োজনে অ্যাপ ইন্সটল করা থাকেনা। আপনার প্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো প্লে স্টোর অথবা অন্যান্য বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট থেকে ইন্সটল করে নিবেন। 


তবে মোবাইলে অ্যাপ ইন্সটল করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ যদি আপনি বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট অথবা প্লে স্টোর বাদ দিয়ে অন্য কোন মাধ্যম থেকে মোবাইলে অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করেন তাহলে সেই মোবাইলে ভাইরাস প্রবেশ করার সম্ভাবনা থাকে। 


পুরাতন ফোনের ফাইল নতুন মোবাইলে ট্রান্সফার করাঃ 

যদি আপনি ইতিপূর্বে পুরাতন মোবাইল ব্যবহার করেন তাহলে সেই পুরাতন মোবাইলের ফাইল নতুন মোবাইলে ট্রান্সফার করবেন। পুরাতন মোবাইলের ফাইল নতুন মোবাইলে ট্রান্সফার করার মাধ্যমে আপনাদের পুরাতন মোবাইলের সকল তথ্য নতুন মোবাইলে আগের মতো দেখতে পারবেন। 


যেমন মনে করুন আপনার পুরাতন মোবাইলে থাকা ইমেজ, ভিডিও, অডিও, কন্টাক্ট লিস্ট সহো সকল তথ্য, এগুলো আপনারা নতুন মোবাইলে ট্রান্সফার করার মাধ্যমে আপনার পুরাতন মোবাইলের সকল তথ্য সেই নতুন মোবাইল দিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন। 


নতুন মোবাইলে ব্যাক কভার ব্যবহার করাঃ 

নতুন মোবাইল আপনি অবশ্যই চকচকে রাখতে চাইবেন। এই কারণে নতুন মোবাইল চকচকে রাখার জন্য মোবাইলে ব্যাক কভার ব্যবহার করতে হবে। মোবাইলে ব্যাক কভার ব্যবহার করলে আপনার মোবাইল হাত থেকে পড়ে গেলেও সেই মোবাইলে দাগ লাগবেনা। তবে অবশ্যই মোবাইলে ব্যাক কভার ব্যবহার করা পূর্বে এর নিয়ম জেনে ব্যবহার করতে হবে। 

আরো পড়ুনঃ মোবাইলে কভার ব্যবহার করার নিয়ম

নতুন মোবাইলে স্ক্রিন প্রটেক্টর ব্যবহার করাঃ 

নতুন মোবাইল কেনার পর অবশ্যই সেই মোবাইলে স্ক্রিন প্রটেক্টর ব্যবহার করতে হবে। যদি আপনার নতুন মোবাইলে আগে থেকেই স্ক্রিন প্রটেক্টর লাগানো থাকে তাহলে তো ভালই আর যদি লাগানো না থাকে তাহলে অবশ্যই ভালো মানের একটি স্ক্রিন প্রটেক্টর লাগিয়ে নিবেন। কারণ এই স্ক্রিন প্রটেক্টর আপনার মোবাইলের ডিসপ্লে সুরক্ষিত রাখবে। 


আপনার মোবাইল হাত থেকে পড়ে গেলে অথবা মোবাইলের স্ক্রিনে ঘষা লাগলেও আপনার মোবাইলের স্ক্রিন এর কোন ক্ষতি হবেনা। পরবর্তীতে আপনি আবার স্ক্রিন প্রটেক্টর পরিবর্তন করার মাধ্যমে মোবাইলের স্ক্রিন নতুন এর মতো করতে পারবেন। 


উপসংহারঃ 

নতুন মোবাইল আমাদের অনেক সখের হয়ে থাকে। তবে এই শখের মোবাইল দীর্ঘদিন ভালোভাবে ব্যবহার করার জন্য এখানে দেয়া কাজগুলো করতে হবে। আশা করছি আপনারা নতুন মোবাইল কেনার পর করণীয় কাজগুলো করে আপনার মোবাইলে পারফরমেন্স দীর্ঘদিন ভালো রাখতে পারবেন। যদি আপনাদের কোথাও বুঝতে অসুবিধা হয় অথবা এই পোস্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আরো কিছু জানতে চান তাহলে কমেন্টে অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়াও এরকম টিপস নিয়মিত পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক ও ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন।

Share This Article On:

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url